সুখের থেকে স্বস্তিতে থাকা ভালো

আমি সারা জীবন সুখ চাইনি। স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছি। সুখের চেয়ে স্বস্তিতে থাকা অনেক আনন্দের। আমার গাড়ি নেই, বাড়ি নেই, ফ্লাট নেই এমন কি ব্যাংকে টাকা নেই- এজন্য আমার একটুও আফসোস হয় না। তবে আমার মতো বয়সে অনেকে টাকা, গাড়ি আর ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে গেছে। কিন্তু তারা স্বস্তিতে নেই। নানান টেনশনে আছে। কারন গাড়ি, বাড়ি করতে গিয়ে তাদের অসৎ হতে হয়েছে। অসৎ মানুষ কোনো দিনও স্বস্তিতে থাকতে পারে না। তবে সাময়িক সুখ পায়। অবশ্য সে সুখ মূল্যহীন। খেয়ে না খেয়ে দিন শেষে স্বস্তিতে থাকা অনেক ভালো। 


আমি একজনকে দেখেছি, সে কোটি কোটি টাকার মালিক। সীমাহীন সম্পদের মালিক। কিন্তু সে ভয়াবহ কষ্টে আছে। ভদ্রলোক কোনো খাবার খেয়েই আরাম পায় না, স্বাদ পায় না। তার বাসায় বাবুর্চি রান্না করে। সবাই সে রান্না খেয়ে আরাম পায় অথচ তিনি কোনো স্বাদ পান না। তিনি যা'ই খান তার কাছে মাটি মাটি লাগে। এই কথা তিনি কাউকে বলতে পারেন না। আমি নিজে দেখেছি, শেষমেষ সে রাস্তার ধারের খাবারও খেয়েছেন। ফুটপাত থেকে কিনে চিতই পিঠা- ঝাল ভরতা দিয়ে খেয়েছেন- না, সে খাবার খেয়েও তিনি আরাম পান নি। ডাক্তার দেখিয়েছেন দেশ বিদেশে। তা-ও লাভ হয়নি।

এই সমাজে টিকে থাকতে হলে, সীমাহীন বুদ্ধিমান হতে হয়। বুদ্ধিমান হওয়া ভালো কিন্তু চালাক নয়। চালাক লোকেরা দুষ্ট হয়। কিন্তু বুদ্ধিমানরা দুষ্ট হয় না, বদলোক হয় না। আমাদের সমাজে চালাক লোকের সংখ্যা বেশি, বুদ্ধিমান লোকের সংখ্যা খুব কম। আমি সারা জীবন চালাক লোকদের কাছ থেকে দূরে থেকেছি। আর বুদ্ধিমানদের সংস্পর্শে থাকতে চেয়েছি। আমার কাছে যদি একটা যাদুর লাঠি থাকতো, তাহলে সেই লাঠি দিয়ে দুষ্টলোকদের শায়েস্তা করতাম। লাঠি দিয়ে মেরে তাদের ভালো লোক বানিয়ে দিতাম। প্রভু আমাকে অলৌকিক ক্ষমতা দাও।

আমাদের নবী হযরত ইউনূস মাছের পেটে আটকা পড়েছিলেন। তিনি চল্লিশ দিন মাছের পেটে ছিলেন। হযরত ইউনূস ইরাক অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। তার জাতির জনসংখ্যা ছিল এক লক্ষের একটু বেশি। ধর্ম প্রচার করার জন্য তিনি এক জাহাজে উঠলেন। হঠাত মাঝ নদীতে ঝড় উঠলো। বিশাল ঝড়। জাহাজ ডুবতে শুরু করলো। নবী ডুবে গেলেন এবং অজ্ঞান হয়ে গেলেন। আল্লাহর নির্দেশে একটি বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেলল। জ্ঞান ফেরার পর তিনি মাছের পেটের মধ্যে নামাজে দাঁড়ালেন। মহান প্রভুর কাছে দুই হাত তুলে করুনা চাইলেন।

'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন' অর্থাৎ 'তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, অবশ্যই আমি অপরাধীদের মধ্যে'। আল্লহ তাকে মাছের পেট থেকে সুস্থ অবস্থায় বের করে আনলেন। ইউনুস (আ) মাছের পেট থেকে উদ্ধারের দুআ করেন নি, আল্লাহর প্রশংসা করে গেছেন আর নিজের দোষ স্বীকার করেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ তাকে উদ্ধার করেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা জেনে না জেনে হাজার অন্যায় করি। এইসবের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত, আল্লাহ জানেন আমরা কি চাই। দুআ কিভাবে করতে হয়, তার বিস্তারিত আরেকদিন লিখব ইনশা আল্লাহ।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট